নবম-দশম শ্রেণির বাংলা বইটি পেয়ে আমার অভিজ্ঞতা

প্রতি বছরের মতো এই বছরও প্রথম মাসেই পেয়ে গেলাম এক ঝাঁক নতুন বই। সবগুলো বই না পেলেও ১১টির মতো বই দেওয়া হলো আমাদের। করোনা মহামারীর কারণে জানুয়ারি মাসের এক তারিখে বই উৎসব না হলেও, ১৯ তারিখে আমরা সবাই বই গ্রহণ করলাম। নতুন বইয়ের ঘ্রাণ পেয়েই মনে এক অজানা আনন্দ উপলব্ধি করলাম। কিন্তু নিমিষেই সেই আনন্দে যেন কোন্ এক কালো ছায়া ব্যাঘাত ঘটালো; মনে করিয়ে দিল এইবারই শেষবারের মতো নতুন বইয়ের ঘ্রাণ নিতে পারছি; এইবারই শেষবারের মতো অজানা আনন্দে মন ভরে যাচ্ছে। কেননা, নবম শ্রেণিতে যেইসব বইগুলো দেওয়া হয়, তা একাধারে নবম ও দশম শ্রেণিতে ব্যবহৃত হবে। তবে আর মন খারাপ করলাম না। মন খারাপ করে কী লাভ? বরং শেষবারের মতো পাওয়া বইগুলো নিয়েই একটু নাড়াচাড়া করা যাক। 
তা-ই করলাম। সবগুলো বই নিয়ে বসে পড়লাম। নবম থেকে দশম শ্রেণির বই বলেই হয়তো বইগুলোর ভর অনেক বেশি। একে একে বইগুলো দেখতে শুরু করলাম। প্রথমেই গণিত, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়, তথ্য এবং যোগাযোগ প্রযুক্তি, ইংরেজি বইগুলো দেখলাম। সবগুলো বই দেখতে যেমন সুন্দর, ভিতরে যেন তেমনি জটিল। কোনো এক মহামানব বলেছিলেন, “মানুষের সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু হলো বই”। কিন্তু এই দৈর্ঘ্যে- প্রস্থে সমৃদ্ধ বইগুলো দেখে তা মনে হলো না। কীভাবে এত বড় বড় বইগুলো পড়ে শেষ করবো কে জানে! বই সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু হলেও, ঠিকমতো সব না পড়লে, সেই প্রিয় বন্ধু বই-ই কম নম্বর খাতায় এনে দিতে কার্পণ্য বোধ করবে না। উচ্ছ্বাসে উল্লাসে গণিতের একটি অংক ও ইংরেজির প্রথম অধ্যায় শিখে ও পড়ে ফেললাম। কিন্তু একটি বই সারাক্ষণই আমার মনে উঁকি দিচ্ছিল। বেশি সময় ধরে পড়বো বলেই একদম শেষের জন্য সেই বইটি রেখেছিলাম- “বাংলা সাহিত্য”। 
বাংলা মাতৃভাষা বলে কি না জানি না, কিন্তু বাংলা বই পড়ার মতো আনন্দ খুব কম বইয়ের মাঝেই পাওয়া যায়। হরেক রকম গল্প ও কবিতার নদীতে ডুব দিলাম। দেখা পেলাম নদীর মাছদের ও গাছগাছালীদের, যাঁদের জন্য এই নদী হয়তো এখনো টিকে আছে। আর লোভ সামলাতে পারলাম না! কবিতা দিয়ে শুরু করলাম। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা “জুতা আবিষ্কার” কবিতাটির নামই যেন আমাকে সর্বপ্রথম আকৃষ্ট করল। সূচিপত্রে দেওয়া পৃষ্ঠা নম্বর অনুসরণ করে চলে গেলাম কবিতাটি পড়তে। চমৎকার এক সৃষ্টি! কবিতার ভাষা আমার জন্য একটু কঠিন হলেও বুঝতে খুব বেশি সমস্যা হয়নি। এত সুন্দর একটি কবিতা পড়ে মনটা ভরে গেল। যেই শব্দগুলো বুঝতে একটু বেগ পেতে হয়েছিল, তা শব্দার্থ থেকে দেখে নিলাম। কবিগুরুর এক মহান আবিষ্কার দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম ও নিজে একবার আবৃত্তি করারও চেষ্টা করলাম। কতটুকু পেরেছি কে জানে! কিন্তু আনন্দটাই সবচেয়ে বড়। শুধু একটি কবিতা পড়েই মন শান্ত হতে চাইল না। এবার গল্পের দিকে মোড় নিলাম। “সুভা”- গদ্যটির নাম শুনে মনে হলো গল্পের বিষয়বস্তু একটু বিচিত্র হবে। সঙ্গে সঙ্গে চলে গেলাম গল্পটি পড়তে। গল্পটি পড়ে মনের মাঝে একটু আঘাত-ই পেলাম। গল্পটি পড়ে উপলব্ধি করলাম মানুষজাতির মাঝে মূল্যবোধের কতই না অভাব! প্রতিবন্ধীদের প্রতি যে আমাদেরও অনেক কর্তব্য আছে, তা ভুলে গেলে চলবে না। সমাজে যে কত অবিচার হয়ে আসছে তা ভেবেই খারাপ লাগতে শুরু করল। কিন্তু শুধু একটি গদ্য আর একটি পদ্য পড়েই কি নতুন বইয়ের মজা শেষ হয়? মনকে শান্ত করতে শরৎচন্দ্র চট্যোপাধ্যায়ের ‘অভাগীর স্বর্গ’, কাজী নজরুল ইসলামের ‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’, জীবনানন্দ দাশের ‘সেইদিন এই মাঠ’ ও সুকুমার রায়ের ‘ছায়াবাজী’ পড়ে ফেললাম। মনের মাঝে খুব শান্তি অনুভব করলাম। কী আশ্চর্যভাবে সাহিত্যিকেরা আমাদের জন্য একেকটি সোনাতূল্য গদ্য, পদ্য, প্রবন্ধ লিখে গেছেন। একেকটি রচনা যেন অতুলনীয়! সব মিলিয়ে বাংলা সাহিত্য বইটি পেয়ে আমার অভিজ্ঞতা ছিল একদমই অন্যরকম। সে এক বিচিত্র অনুভূতি। তা বলে বা লিখে প্রকাশ করলে শুধুমাত্রই উপহাস করা হবে। এটি অনুভূতির বিষয়। এই অভিজ্ঞতা শুধু অনুভবই করা যায় মাত্র!
Categories Bengali blogs/Experience

Post Author: Labiba

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *